প্রথমবার ওয়্যাক্সিং করাতে গেলে ভয় পাওয়া একদম স্বাভাবিক। কারও কাছ থেকে শুনেছি – “ওয়্যাক্সিং মানেই যন্ত্রণা!” আবার কেউ বলে – “না, একবার করলে বুঝবে, এটা আসলে স্কিনকেয়ারের ম্যাজিক!”
তাহলে আসল সত্যিটা কী? ওয়্যাক্সিং আসলে কী, কেন করা হয়, আর কেমন প্রস্তুতি নিতে হয়? আজ আমরা একদম সহজ ভাষায় পুরো বিষয়টা জেনে নেব।
ওয়্যাক্সিং কী?
ওয়্যাক্সিং হলো শরীরের অবাঞ্ছিত লোম দূর করার একটি জনপ্রিয় ও কার্যকরী পদ্ধতি। এতে বিশেষ ধরনের ওয়্যাক্স বা মোম জাতীয় পদার্থ ত্বকে লাগানো হয়, যা লোমের গোঁড়ায় লেগে যায়। তারপর এক টানে লোমসহ ওয়্যাক্স তুলে ফেলা হয়।
এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- ওয়্যাক্সিং শুধু লোমই তুলে ফেলে না, বরং মৃত কোষও পরিষ্কার করে দেয়, ফলে ত্বক হয় মসৃণ, নরম ও উজ্জ্বল। ওয়্যাক্সিংয়ের প্রভাব সাধারণত ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে, যা শেভিংয়ের তুলনায় অনেক দীর্ঘস্থায়ী।
কেন ওয়্যাক্সিং এত জনপ্রিয়?
ওয়্যাক্সিং শুধু লোম তোলার পদ্ধতি নয়, এটি হলো ত্বকে মসৃণ ও উজ্জ্বল করার একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। এটি লোমকে গোঁড়াসহ তুলে ফেলে, ফলে লোম গজায় ধীরে। ত্বক হয় নরম, মসৃণ ও পরিষ্কার। দীর্ঘদিন ওয়্যাক্সিং করলে লোম পাতলা হয়ে আসে। শেভিংয়ের মতো ত্বক কাটার ভয় থাকে না। আর সবচেয়ে বড় কথা ওয়্যাক্সিং করার পর নিজের শরীরের প্রতি যত্নবোধ বাড়ে, আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়।
ওয়্যাক্সিংয়ের ধরন
- Hot Wax: গরম অবস্থায় ওয়্যাক্স লাগানো হয়, যা ঘন লোমের জায়গায় যেমন পা, হাত, আন্ডারআর্ম বা বিকিনি এরিয়ায় ব্যবহৃত হয়।
- Cold Wax: রেডিমেড স্ট্রিপ আকারে পাওয়া যায় যা সহজে ব্যবহার করা যায়, তবে গভীর লোম তুলতে ততটা কার্যকর নয়।
- Sugar Wax / Organic Wax: প্রাকৃতিক উপাদান (চিনি, লেবু, মধু) দিয়ে তৈরি যা সংবেদনশীল ত্বকের জন্য আদর্শ।
ওয়্যাক্সিংয়ের আগে কী কী মাথায় রাখা জরুরি
ওয়্যাক্সিংয়ের আগে কিছু বিষয় মানলে ব্যথা কমে, আর ফলাফলও হয় নিখুঁত।
- এক্সফোলিয়েট করা: ওয়্যাক্সিংয়ের আগের দিন ত্বক হালকা স্ক্রাব করতে হবে, যাতে মৃত কোষ ও ইনগ্রোন হেয়ার কমে।
- ত্বক শুষ্ক রাখা: ওয়্যাক্সিংয়ের আগে কোনো ক্রিম, লোশন বা তেল ব্যবহার করা যাবে না। ত্বক শুকনো থাকলে ওয়্যাক্স ভালোভাবে লেগে থাকে।
- সঠিক লম্বা লোম রাখা: লোমের দৈর্ঘ্য কমপক্ষে ১/৪ ইঞ্চি হওয়া দরকার, না হলে ওয়্যাক্স ঠিকভাবে ধরে না।
- সংবেদনশীল সময় এড়িয়ে চলক: মাসিকের সময় বা অসুস্থ অবস্থায় ওয়্যাক্স করানো ঠিক নয়, কারণ ত্বক তখন বেশি সেনসিটিভ থাকে।
- আরামদায়ক পোশাক পরা: স্যালনে যাওয়ার সময় ঢিলেঢালা পোশাক পড়তে হয় যাতে ওয়্যাক্সিংয়ের পর ঘষা না লাগে।
- প্রথমবার ওয়্যাক্সিং: প্রথমবার ওয়্যাক্সিং হলে বিউটিশিয়ানকে অবশ্যই জানাতে হবে যাতে তারা বাড়তি যত্ন নিতে পারে।
ওয়্যাক্সিং প্রক্রিয়া
ওয়্যাক্সিং প্রক্রিয়া একেবারেই সহজ, তবে এতে দক্ষতার প্রয়োজন হয়। সাধারণত স্যালনে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়-
- ত্বক পরিষ্কার করা: প্রথমে ওয়্যাক্স করার জায়গাটা ভালোভাবে ক্লিনজার বা ওয়াইপ দিয়ে পরিষ্কার করা হয় যাতে ধুলাবালি বা তেল না থাকে।
- ওয়্যাক্স গরম করা: উষ্ণ ওয়্যাক্সকে এমনভাবে গরম করা হয় যাতে তা ত্বকে লাগানোর উপযোগী হয়।
- ওয়্যাক্স লাগানো: একটি স্প্যাচুলা বা স্টিক দিয়ে লোমের বৃদ্ধির দিক অনুযায়ী পাতলা করে ওয়্যাক্স লাগানো হয়।
- ওয়্যাক্স স্ট্রিপ ব্যবহার: ওয়্যাক্সের উপরে কাপড় বা পেপার স্ট্রিপ লাগিয়ে কয়েক সেকেন্ডে সেট হতে দেওয়া হয়।
- স্ট্রিপ টেনে তোলা: দ্রুত হাতে স্ট্রিপটা বিপরীত দিকে টেনে তোলা হয়। এতে লোম গোঁড়াসহ উঠে আসে।
- ঠান্ডা কমপ্রেস ও আফটার কেয়ার: শেষে অ্যালোভেরা জেল বা কুলিং লোশন লাগানো হয় যেন ত্বকে জ্বালাপোড়া বা লালচে ভাব না থাকে।
ওয়্যাক্সিংয়ের সময় সতর্কতা
ওয়্যাক্সিং চলাকালীন কিছু নিয়ম মানলে অস্বস্তি অনেক কম হয়। যেমন ভয় বা টেনশন করলে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে তাই রিলাক্স থাকতে হবে। ওয়্যাক্স টানার সময় বেশি নাড়াচাড়া করা যাবে না তা না হলে ত্বকে টান পড়তে পারে। ওয়্যাক্সিং এর সময় ব্যথা লাগলে সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা প্যাক ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি ওয়্যাক্স যেন বেশি গরম না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে তা না হলে ত্বক পুড়ে যেতে পারে।
ওয়্যাক্সিংয়ের পর যত্ন নেওয়ার টিপস
ওয়্যাক্সিং শেষ হওয়ার পরের যত্নই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা সঠিকভাবে পালন করলে ত্বক হয়ে উঠবে মসৃণ এবং প্রাণ উজ্জ্বল।
- ২৪ ঘণ্টা গরম পানি এড়িয়ে চলতে হবে
- সুগন্ধিযুক্ত লোশন বা পারফিউম ব্যবহার করা যাবে না
- ঢিলেঢালা পোশাক পড়তে হবে যাতে ঘষা না লাগে।
- অ্যালোভেরা জেল বা কুলিং লোশন লাগাতে হবে।
- সরাসরি রোদে যাওয়া যাবে না, এতে ত্বক পুড়ে যেতে পারে।
- ওয়্যাক্স করা জায়গা খোঁচানো বা ঘষা থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রথমবার ওয়্যাক্সিং মানেই ভয় নয়। এটা আমাদের নিজেদের যত্ন নেওয়ার সাহসী এক পদক্ষেপ। এই সাহসে পদক্ষেপে আপনাকে সহযোগিতা করতে পারে রমণী। রমণী বাংলাদেশের নারীদের জন্য এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যা সৌন্দর্য, স্বাস্থ্য ও প্রশান্তির যত্ন একসাথে দেয়। আপনি চাইলেই রমণী অ্যাপ বা ওয়েবসাইট থেকে ওয়্যাক্সিং সার্ভিস বুক করতে পারেন, একদম আপনার সুবিধামতো সময়ে।
শুধু তাই নয় আপনি চাইলে রমণীর স্টুডিওতে যেয়েও ওয়্যাক্সিং সার্ভিসটি নিয়ে নিতে পারেন। আমাদের ঠিকানা:
লেভেল- ৩, হাউজ নং- ১, রোড- ১, গুলশান- ১, ঢাকা ১২১২
ত্বকের যত্ন মানে শুধু সুন্দর দেখা নয়, বরং নিজের শরীরকে ভালোবাসা। সেই যত্নে যদি আপনারা রমণীর ছোঁয়া পেয়ে যান, তাহলে সেটি আপনাকে করে তুলবে আরো আত্মবিশ্বাসী।